বিদেশে Higher study’র জার্নিটা আসলে কারো জন্যই সহজ থাকেনা। যাদের এই জার্নিটা আমি শুনেছি বা দেখেছি প্রায় সবারই অনেক প্রচেষ্টার ফলাফল হল তাদের এই সফলতা; তারা এমন ভাবে পরিশ্রম করেছেন যা তাদেরকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। আমার গল্পটা সাধারণ। কোনো একটা অনিশ্চয়তা, কিছু না পাওয়া, আর জেদ থেকে শুরু। যখনই কেউ এই সিদ্ধান্ত নেয়, “বিদেশে পড়তে যাব”, তখনই তার মনে নানারকম প্রশ্ন আসতে শুরু করে, এরপর কি করব, কিভাবে করব, কত সময় লাগবে, কত টাকা লাগবে, পারব কিনা, পারলেও হবে কিনা, আমি যোগ্য কিনা, অনেকেইতো বলে সম্ভব না, অনেক মেধাবি হওয়া লাগে, আরো অনেক প্রশ্ন। এইসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিলোনা। তবুও আমি অনেক দুশ্চিন্তা কমিয়ে সাহস করে আমার পথচলা শুরু করি এবং সৌভাগ্যবশত আমার USA-তে পড়তে যাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে সক্ষম হই।
যাহোক, শুরুতে আমার ধারনা ছিল যে জিআরই তে ভালো স্কোর হলেই USA নিশ্চিত। এই বিশ্বাস কবে ভাঙ্গে সেটা পরে বলছি। আপাতত জিআরই টাই আমার কাছে পাহাড়সম ছিল। এর পাশাপাশি জব না পাওয়াসহ বিচিত্র রকমের চাপ এই সময়টাতে সবারই থাকে। শুরু করার আগে প্ল্যান ছিল ৩৩০ তুলবো। এরপর জিআরই তে কি কি আছে আর ওগুলা কেমন জানার পরে বুঝতে পারি যে ৩৩০ বেশি হয়ে যায়, বরং ৩২০ তুলবো। প্রিপারেশন শুরু করার আগে ম্যাথ শেষ কবে করেছিলাম মনে নেই তাই ভয় ছিল ম্যাথ নিয়ে। প্রিপারেশন শুরুর পর বুঝতে পারি যে ম্যাথ কিছু পারলেও ভারবাল কিছু পারবোনা। এরপর কনফিডেন্স আরো কমে। স্কোর ৩২০ তোলার কনফিডেন্স আরো কমে। কোচিং এ ও ভর্তি হই জিআরই এর জন্য। পরীক্ষার সময় যত আসছিল বুঝতে পারছিলাম যে ৩০০ স্কোর তুলতে কষ্ট হয়ে যাবে। এরপর পরীক্ষা দিলাম, ৩০০ পেলাম। শুধু ৩০০ ই। মন অনেক খারাপ ছিল। কারণ এই ৩০০ দিয়ে কি হবে। জিআরই তো একমাত্র ভরসা ছিল USA তে আসার। আবার প্রিপারেশন নেয়া, আবার অনেক টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সাহস ছিলনা আর। আবার পরীক্ষা দিলে যে ভালো স্কোর হবে সেটার নিশ্চয়তা নেই কোনো। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি যে জিআরই টাই সবকিছু না। আসলে USA তে কোনো একটা দিক বিবেচনায় এডমিশন দেয়া হয়না। কোনো একটা দিক খারাপ হলে যদি অন্য দিক ভালো থাকে তাহলেও এডমিশন পাওয়া যায়। তাই আমি আবার চেষ্টা শুরু করি। জিআরই যা ছিল তাই থাক। IELTS ভালো করে দিই। স্কোর ৭ তুলতে পারি। আমি খুশিই ছিলাম। ভেবেছিলাম জিআরই আর IELTS হয়ে গেছে, এবারতো USA নিশ্চিত। মূলত এই সময়ে এসে বুঝতে পারি যে USA হয়তো আসা হবেনা আমার।
After you have checked all the basic requirements (a bachelor’s degree/MS, GRE, IELTS, etc.) for applying to a graduate program in the USA, the next most important and uncertain thing is to know where to apply. আমি যখন এপ্লাই করা নিয়ে ভাবছিলাম, তখন ভেটেরিনারি থেকে পাশ করে কোথায় এপ্লাই করে এসব নিয়ে কোনো ধারনাই ছিলনা আমার। একটা ইউনিভার্সিটি এর ওয়েভপেইজে কোথায় খুঁজবো তাই জানিনা। এইটুকু বুঝতে আর ভেটেরিনারি/ এনিম্যাল সাইন্স রিলেটেড সাবজেক্ট আছে এমন ইউনিভার্সিটি এর লিস্ট খুজে বের করতেই ২ সপ্তাহের উপর সময় লেগে যায়। প্রথমে যে ভুল করেছিলাম তা হলো আমি শুধুমাত্র আমার মাস্টার্স এর সাবজেক্ট আছে এমন ইউনিভার্সিটি খুঁজেছি। For those who have a DVM degree (Doctor of Veterinary Medicine), you basically can choose any of the major subject paths for your higher education. It just depends on the depth of experience that you had on a specific area and how you are able to highlight it to the graduate committee or the major professor. যাইহোক, প্রথমে প্রায় ১৮০ ইউনিভার্সিটি এর লিস্ট করি যেটাতে আমার সাবজেক্ট রিলেটেড ডিপার্টমেন্ট বা এটলিস্ট কোনো প্রফেসর আছে। এরপর আমার নিজের যোগ্যতা, ইউনিভার্সিটি এর র্যাঙ্কিং, রিকোয়্যারমেন্টস, প্রফেসর কি কাজ করে, আমি কোন কাজ করতে চাই এসব এর ভিত্তিতে শর্টলিস্ট করি ২৫-৩০ টি ইউনিভার্সিটি এর। তারপর প্রতিটি ইউনিভার্সিটি এর যে কয়জন প্রফেসরকে সিলেক্ট করি তাঁদের ইমেইল করা শুরু এবং পরবর্তীতে আরো হতাশার শুরু। এখানে অনেকগুলো বিষয় মিলতে হয় পজিটিভ রিপ্লাই পাওয়ার ক্ষেত্রে। You are emailing a professor who happens to be searching for a graduate student at that time in an area in which you have the aligned qualifications. Moreover, you have all the required qualification for graduate admission, you have prepared your CV in a way that somehow matched with one of the things that professor was looking for, and may be most importantly you wrote a convincing email that compelled that professor to have a look at your transcripts and CV and to email you back. এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমি এগুলো কাউকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বলছিনা। কারণ এভাবেই ঘটে ব্যাপারগুলো। আর যার কারণে অনেক সময় হতাশা চলে আসে পজিটিভ রিপ্লাই না পেলে। কিন্তু যদি যথেষ্ট সংখ্যক ইমেইল করা যায় তাহলে পজিটিভ রিপ্লাই পাওয়া যায়। আর যথেষ্ট সংখ্যক বলতে বুঝায় যতক্ষণ না এডমিশন পাওয়া হয় তার আগে পর্যন্ত। আমি সর্বমোট ১৯০ জন প্রফেসর কে ইমেইল করেছি USA আর CANADA মিলিয়ে। কিন্তু এটা অনেক বেশি যে তা কিন্তু না। এমনও অনেকেই আছেন যারা ৩০০+ ইমেইল করেছেন। আমি আসলে যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হলো দাঁত কামড়ে পরে থাকতে হবে। ওই সময়টাতে ফোন এ একটা কিছু আসলে ফোন হাতে নেয়ার আগে হার্টবিট বেড়ে যেত আর ভাবতাম একটা বুঝি পজিটিভ রিপ্লাই আসছে। পজিটিভ রিপ্লাই মানে এটা না যে ভালো কিছু কথা বলেছে। পজিটিভ রিপ্লাই মানে এডমিশন হওয়া। সত্যি কথা বলতে এই ১৯০ জনের মধ্যে ১৮৯ জনের কাছ থেকেই নেগেটিভ রিপ্লাই পাই। আর এটা ভাবছিলাম যে ওই বছর আমার আর হবেনা। আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। মানসিক অনেক চাপে ছিলাম কারণ আরো এক বছর অপেক্ষা করার সুযোগ আমার ছিলনা তখন আর। ১৯০ জনের বাকি একজনকে ইমেইল পাঠানোর সময় একটা ভুল করি আমি। তাঁকে যখন ইমেইল করি তখন ২০১৮ এর ফল সেমিস্টারের এপ্লিকেশনের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। চেয়েছিলাম ২০১৯ স্প্রিং সেমিস্টারে এডমিশনের কথা বলব। কিন্তু এতদিন ২০১৮ এর ফল সেমিস্টারের জন্য সবাইকে ইমেইল করতে করতে ভুল করে একই ইমেল ওই প্রফেসরকেও করে বসি। ভুল বুঝার পরে ভেবে নিয়েছিলাম যে এতোগুলো নেগেটিভ রিপ্লাই পেয়েছি, আরো একটা পাবো আরকি। কিন্তু ওটাই আমার প্রথম পজিটিভ রিপ্লাই ছিল। কিন্তু চেয়েছিলাম পিএইচডি এডমিশন, ওই প্রফেসর দিতে চেয়েছিল এমএস এর এডমিশন। অনিচ্ছা প্রকাশ করিনি যদিও। আবার করব এমএস প্রয়োজন হলে। কিন্তু আবার এমএস করতে হয়নি।
আমি আরো একটি রিপ্লাই পেয়েছিলাম। রিপ্লাই বললে ভুল হবে কারণ আমি এই প্রফেসরকে কখনো ইমেইল ই করিনি। ইমেইল দেয়ার পাশাপাশি আমি ৮ টি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছিলাম পজিটিভ রিপ্লাই না পেলেও। এই ৮ টি ইউনিভার্সিটি বাছাই করার কাজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পজিটিভ রিপ্লাই না পেয়েও এডমিশন পাওয়া যায় যদি সঠিক ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করা হয়। আমি এই বাছাই এর কাজটি করেছিলাম আমার নিজের প্রোফাইল, ইউনিভার্সিটির রিকোয়্যারমেন্টস, কোন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসররা তুলনামূলক ভালো রিপ্লাই দিয়েছে, আর আমার intuition থেকে। USA তে কোনো একটি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করার পর এপ্লিকেশন টি গ্রেজুয়েট স্কুল হয়ে ডিপার্টমেন্টে পৌঁছায়। কেউ তার স্টেটমেন্ট অফ পারপাসে (SOP) যে সকল প্রফেসরের নাম উল্ল্যেখ করে, ওই ডিপার্টমেন্টের গ্র্যাজুয়েট কোর্ডিনেটর ওই এপ্লিকেশনটি সেই সকল প্রফেসরের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আমার এপ্লিকেশনটি এমন একজন প্রফেসরের কাছে যায়, যার নাম আমি আমার SOP তেও দিইনি। যার কারণে এই ইমেইলটি আমি আশা করিনি। When I had given up all of my hopes, I received that most unexpected, yet the only thing I ever expected, email. উনি আমাকে ইমেইল দিয়ে বললেন যে উনি জানেন যে উনার ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চেয়ে একটু ভিন্ন কিন্তু আমি যদি ইন্টারেস্টেড থাকি উনার রিসার্চ এরিয়াতে কাজ করতে তাহলে উনি আমার সাথে কথা বলবেন। এরপর একটি জুম মিটিং, একটি ফুল ফান্ডেড PhD অফার, আর USA-তে চলে আসা।
আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। প্রথম বারের চেষ্টায় USAতে আসতে পারব ভাবিনি। ধাপগুলো পার হতে সময় লাগে। অনেকের সে সময়টা হয়তো থাকেওনা। আবার একবারে না হলে তখন ব্যাপারটা আরো কঠিন মনে হয়। তার উপর আসেপাশে নিরুৎসাহিত করার মানুষ থাকলে স্বাভাবিক ব্যাপার গুলোও আরো কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আবার সাহায্য করার মানুষ ও অনেক থাকে। খুঁজে নিতে হয় শুধু। আমি অনেকের কাছ থেকেই অনেকভাবে সাহায্য পেয়েছি। তাঁদের সবার কাছেই আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সত্যি কথা বলতে সাহায্য করার মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই নিজের চেষ্টাটা বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরী। If you try hard enough, you will get those favors to help you to reach your goal.
আমি মনে করি কোনো কিছু করার আগে প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে কেউ কি চায়। যদি কেউ সত্যিই চায় তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর সময় যে কষ্টগুলো করতে হয় ওগুলোকে আর কষ্ট মনে হয়না। USA-তে PhD করা হলো অন্য এক অভিজ্ঞতা। It’s a lifetime experience that will shape you. অনেক চড়াই উতরাই থাকে। অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতা থাকে। অনেক স্ট্রাগল থাকে। মাঝে মাঝে মনে হতো পিএইচডি হয়তো শেষ করতে পারবোনা। কিন্তু আবার অনেক কিছুই পাল্টে যায়। নিজের মাঝেই অনেক কিছু পাল্টে যায়। ভাবনা গুলোও পাল্টায়। সবকিছুর পেছনেই একটা মোটিভেশন থাকে যে I really have wanted to achieve this. PhD-টাও শেষ করতে পারি আল্লাহর রহমতে। যারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য এটা বলবো যে if you stick to your dream no matter what, it will come along when you expect it the least. Best of luck to all who are trying!
আফরোজা আক্তার
পোস্টডক্টরাল রিসার্চার
নিউ মেক্সিকো স্টেইট ইউনিভার্সিটি